এ বছর দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল কোনোরকমে তার এক-তৃতীয়াংশ অর্জিত হয়েছে বলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সরকারি নথিতে দেখা গেছে।
ইউএনবির হাতে আসা নথিতে দেখা যায়, চলতি বছরে দেশের বিদ্যুৎ গ্রিডে মাত্র ৯৬৫ মেগাওয়াট উৎপাদনের সক্ষমতা যুক্ত হয়েছে। যদিও উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ৫১৯ মেগাওয়াট বিদ্যুতের কেন্দ্র স্থাপন করা। যার মধ্যে দুই হাজার ৪৬৫ মেগাওয়াট বেসরকারি খাতে এবং বাকিটুকু সরকারিভাবে হওয়ার কথা ছিল।
আরও পড়ুন: বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প অনুমোদন
প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১৯ হাজার ৬৩০ মেগাওয়াট। এটি গত ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫৯৫ মেগাওয়াটে।
এ বছর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বৃদ্ধি হয়েছে ২০১৯ সালের তুলনায় অর্ধেক। গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বিদ্যুতের গ্রিডে যুক্ত হয়েছিল এক হাজার ৯৪৫ মেগাওয়াট। তখন দেশের ১৭ হাজার ৬৮৫ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র বেড়ে হয়েছিল ১৯ হাজার ৬৩০ মেগাওয়াট।
আরও পড়ুন: দেশের সর্ববৃহৎ সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রে যুক্ত হলো হুয়াওয়ের স্মার্ট ফটোভোলটাইক
অগ্রগতিতে এ ধাক্কার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা কোভিড এবং এর ফলে আরোপিত লকডাউনের কারণে মাঠ পর্যায়ের কাজ গুরুতরভাবে বিঘ্নিত হওয়াকে দায়ী করছেন। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন সম্প্রতি এক ওয়েবিনারে বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতের কার্যক্রম মহামারিতে যথেষ্ট পরিমাণে প্রভাবিত হয়েছিল।’
পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে ২০২০ সালে মোট ছয়টি নতুন ইউনিট উৎপাদনে গেছে এবং তাতে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে এক হাজার ১২৭ মেগাওয়াট উৎপাদনের সক্ষমতা। সেই সাথে ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে পাঁচটি ছোট ইউনিট।
আরও পড়ুন: দক্ষিণাঞ্চলে আরেক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে: নৌপ্রতিমন্ত্রী
উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে ২০২০ সালে যেসব ইউনিট স্থাপিত হয়েছে তা হলো- সিলেটের ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল কেন্দ্র, জুলদা অ্যাকর্ন (বেসরকারি) বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১০০ মেগাওয়াটের ইউনিট-২, বাংলাদেশ-চীনের (যৌথ উদ্যোগ) পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬২২ মেগাওয়াটের ইউনিট-১, মেঘনাঘাটে ওরিয়নের (বেসরকারি) ১০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, সুতিয়াখালী-ময়মনসিংহ সৌর (বেসরকারি) ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং মানিকগঞ্জ (বেসরকারি) ১৬২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র।
অন্যদিকে, বন্ধ করে দেয়া কেন্দ্রগুলো হলো- ৩২ মেগাওয়াটের হরিপুর জিটি২, ভেড়ামারা ২০ মেগাওয়াট জিটি২, ভেড়ামারা ২০ মেগাওয়াট জিটি৩, বরিশালে ২০ মেগাওয়াট জিটি১ এবং ২০ মেগাওয়াট জিটি২।
আরও পড়ুন: মোংলায় ৫৫ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রস্তুত হওয়ায় এক বা দুই দিনের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে আরও ৬২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতে পারে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এখন পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে বলে বিপিডিবির এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বিদ্যুতের বিদ্যমান পরিকল্পনায় ধীরে ধীরে সরবরাহ বাড়াতে চান। কারণ উৎপাদনের সাথে দেশের বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি মিলছে না। বর্তমানে গ্রীষ্ম মৌসুমে ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে আর শীতকালে এ চাহিদা আট হাজার ৮০০ মেগাওয়াটেরও নিচে নেমে আসে।
আরও পড়ুন: গ্রামীণ অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষমতা বাড়াতে এডিবির সাথে চুক্তি
বিপিডিবি পরিসংখ্যান দেখা যায়, গ্রাহক পর্যায়ে দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা ছিল আট হাজার ৮৮৩ মেগাওয়াট, যা উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক।